পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাম আমলে এই শক্তি ছিল মূলত সিপিএমের কো-অর্ডিনেশন কমিটির হাতে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর গত ১৪ বছরে সেই প্রভাবক্ষেত্র ধীরে ধীরে বদলেছে। বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন কেবল বামেদের অচলায়তন ভেঙেই দেয়নি, বরং বিজেপির আগ্রাসন রুখতেও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
এই সংগঠনকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি মানস ভূঁইয়া। তিনি বর্তমানে ফেডারেশনকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন প্রতাপ নায়েকের হাতে। প্রতাপ নায়েক ফেডারেশনের আহ্বায়ক হিসেবে বিভিন্ন দফতরের কর্মীদের মধ্যে সংগঠনী দাপট বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তরুণ নেত্রী পারমিতা সেনকে।
রাজ্য প্রশাসনের একাধিক প্রকল্প— যেমন ‘দুয়ারে সরকার’, ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’— কেবল সরকারি কর্মচারীদের সক্রিয় সহযোগিতার ফলেই প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরণের কল্যাণমূলক কর্মসূচি মূলত তৃণমূল সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম ভিত্তি। তাই কর্মচারী সংগঠনের শক্তিকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়।
বাম আমলে যেমন সবাই জানত, প্রকৃতপক্ষে সরকার চালানো হতো কো-অর্ডিনেশন কমিটির টেবিল থেকেই, তেমনি বর্তমান সময়ে ফেডারেশনের কার্যক্রমই তৃণমূলের জন্য বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের চাপ, বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি কিংবা সিপিএমের আড়ালভিত্তিক কৌশল মোকাবিলায় এই ফেডারেশনই আগামী দিনে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় ‘তুরুপের তাস’ হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
রাজ্যজুড়ে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর পর্যন্ত ফেডারেশনের প্রভাব বিস্তার ঘটেছে। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সংগঠনী শক্তিই বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠবে।
অতএব, তিন দশক আগে নদী ও বন্যা সমস্যার প্রশ্নে আলোচনায় যিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সেই মানস ভূঁইয়া এখন তৃণমূল সরকারের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র— সরকারি কর্মচারী সংগঠন— গড়ে তুলে রাজনৈতিকভাবে দলকে অক্সিজেন জোগাচ্ছেন।