Languages

সংগ্রামী অধ্যায়ের সমাপ্তি! ঝাড়খণ্ডকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন শিবু সোরেন

প্রয়াত ঝাড়খণ্ডের সংগ্রামী নেতা শিবু সোরেন। সোমবার ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। তাঁর জীবনচিত্র যেন এক নিমজ্জিত উলগুলানের কথা বলে। ভারতের জনজাতি আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন শিবু সোরেন। ১৯৪৪ সালের ১১ জানুয়ারি বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রামগড় জেলার একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত এই নেতা ছিলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (JMM)-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও দীর্ঘদিনের সভাপতি। তিনবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেছেন তিনি—২০০৫, ২০০৮-২০০৯ এবং ২০০৯-২০১০ সালে।

ছোটবেলাতেই বাবা খুন হন। পড়াশোনা ছেড়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য কাঠ ব্যবসা শুরু করেন কিশোর শিবু। এর মাঝে ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে জনজাতি জমির অধিকার রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হয়ে রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ করেন। সেই সময় থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন এক বলিষ্ঠ জনজাতি নেতা। যদিও তার রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে সহিংসতার অভিযোগ বহুবার জড়িয়ে পড়েছে।১৯৭৪ সালে একটি উৎসব ঘিরে বচসার জেরে দুইজনের হত্যাকাণ্ড এবং ১৯৭৫ সালে একটি মুসলিম গ্রামে হামলার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রুজু হয়। এরপরও একাধিক অপরাধমূলক মামলায় তার নাম জড়ায়, যা পরবর্তী সময়ে তার প্রশাসনিক জীবনকে বেশ জটিল করে তোলে।

১৯৭৩ সালে সোরেন ও তার সঙ্গীরা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা গঠন করেন। প্রধান লক্ষ্য ছিল বিহারের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ মিলিয়ে একটি পৃথক রাজ্য গঠন। এই লড়াই অবশেষে ২০০০ সালে সফল হয় এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জন্ম হয়। এরপর শ্রমিক ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে দলীয় সমর্থন বাড়িয়ে তোলেন সোরেন। ১৯৮৭ সালে তিনি JMM-এর সভাপতি হন।

শিবু ১৯৭৭ সালে লোকসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে হেরে গেলেও, ১৯৮০, ১৯৮৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০৪ সালে নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে রাজ্যসভার সদস্য হন, কিন্তু পরে লোকসভা উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে পদত্যাগ করেন।২০০৪ সালে ইউপিএ জোটের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কয়লা ও খনি মন্ত্রকের দায়িত্ব পান। কিন্তু পুরনো হত্যা মামলার কারণে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। এক মাস জেল হেফাজতের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার মন্ত্রিত্ব ফিরে পান। তবে ২০০৬ সালে নিজের প্রাক্তন সচিবের হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ফের পদত্যাগ করতে হয় তাকে। ২০০৭ সালে দিল্লি হাইকোর্ট সেই রায় খারিজ করে দেয় এবং ২০০৮ সালে ফের মুখ্যমন্ত্রী হন, যদিও পরবর্তী উপনির্বাচনে হেরে যাওয়ায় আবার পদত্যাগ করতে হয়। ২০০৯ সালে JMM-বিজেপি জোট সরকারে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হলেও ছয় মাসের মধ্যেই বিজেপি সমর্থন প্রত্যাহার করায় পদত্যাগে বাধ্য হন।

২০০৮ ও ২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে থাকা দুটি প্রাচীন হত্যা মামলায় তিনি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হন। ২০১০ সালে ষষ্ঠবারের মতো JMM সভাপতির দায়িত্ব পান, কিন্তু তখন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং তিনি ধীরে ধীরে দলের নেতৃত্ব তার পুত্র হেমন্ত সোরেনের হাতে তুলে দেন। ২০২০ সালে তিনি রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন।

শিবু সোরেনের জীবন কাহিনি একদিকে যেমন জনজাতি অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক, অন্যদিকে তা অপরাধ ও রাজনীতির জটিল সম্পর্কের উদাহরণ। তবুও তার অবদান নিঃসন্দেহে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সৃষ্টি ও জনজাতিদের রাজনৈতিক সত্ত্বা প্রতিষ্ঠায় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।