ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলায় একদল পুলিশ কর্মীর জামিনের শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্টে আজ উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রবীণ আইনজীবী ও তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ নিজেকে মামলার শুনানি থেকে সরিয়ে নেন। তিনি জানিয়ে দেন, শুধুমাত্র হোমগার্ডদের জামিন সংক্রান্ত বিষয় তিনি শুনবেন, বাকি মামলাগুলি অন্য এজলাসে স্থানান্তর করতে হবে।
ঘটনার সূত্রপাত অভিজিৎ সরকার খুনের মামলায় দুই পুলিশ কর্মীর জামিন আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে। সিবিআইয়ের সিনিয়র আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় সংস্থাটি শর্ট পাসওভার (অর্থাৎ কিছুটা সময় বিলম্বে শুনানি) চায়। এই আবেদনের প্রবল বিরোধিতা করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শুনানি শুরু করতে চাইলেও বিচারপতি জানান, তিনি আগামী ১৫ দিন সার্কিট বেঞ্চে থাকবেন, তাই হয় শুনানি পিছিয়ে দিতে হবে, নয়ত মামলাটি অন্য এজলাসে পাঠাতে হবে। কিন্তু মামলায় জড়িত সবপক্ষই বিচারপতি ঘোষের এজলাসেই শুনানির পক্ষপাতী ছিলেন।
এমন অবস্থায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি অভিযোগ করেন, “এই রাজ্যে বিচার পেতে গেলে বিচারকদের কৃপা পেতে হয়। চার্জশিটের পরে সমন পাঠানো হয়েছে, মানুষ সিবিআইয়ের ভয়ে আছে।” তিনি আরও বলেন, “সিবিআই রক্তপিপাসু হয়ে উঠেছে।” বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ কল্যাণের এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “আপনি আদালত সম্পর্কে লাগাতার অপমানজনক মন্তব্য করছেন, যা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আদালত আপনার বক্তৃতা শুনবে না মিস্টার বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি এই মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি।”
বিচারপতি ঘোষ এরপর প্রশ্ন তোলেন সিবিআইয়ের দিকেও—“সমন এতদিন পরে কেন পাঠালেন? গ্রেফতার না করে কীভাবে আপনি আপনার অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন?” সিবিআইয়ের আইনজীবী পাল্টা দাবি করেন, “এই মামলায় পুলিশ ও প্রভাবশালী নেতারা মিলে কাজ করেছেন। তারা তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছে, অভিযুক্তের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করানো হয়েছে।”