Languages

নেপালের জেন-জি আন্দোলনের নেপথ্যে সুদান গুরুং!

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে মঙ্গলবার সেই দৃশ্য দেখা গেল, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের গণআন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায়। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৈডালের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। একের পর এক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। গোটা দেশ জুড়ে তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রায় পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন এবং তিনি তা মেনে নেন। এই গণআন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে এক তরুণ মুখ—সুদান গুরুং।

২০১৫ সালে নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সুদান গুরুং নিজের সন্তানকে হারান। এই ব্যক্তিগত শোক তাঁকে পিছু টেনে ধরেনি; বরং তাঁকে এক অনন্য সামাজিক যাত্রার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ওই বছরেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘হামি নেপাল’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনটি মূলত ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে গড়ে ওঠে এবং প্রান্তিক অঞ্চলে ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ শুরু করে। ধীরে ধীরে সুদান হয়ে ওঠেন নেপালের তরুণদের আস্থার প্রতীক। বিশেষ করে, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রতিবাদে তিনি এগিয়ে আসেন এবং জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন।

সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুদান গুরুং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিবাদ গড়ে তুলছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে তিনি ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেন যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলের আহ্বান জানান। পোস্টে বলা হয়েছিল, স্কুলের পোশাক পরে হাতে বই নিয়ে তারা মিছিলে অংশ নিক। উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের আওয়াজ তুলতে উৎসাহিত করা।

তবে এই আহ্বান সরকারের কাছে যেন হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকার ২৬টি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করে দেয়। এটি জনতার কণ্ঠরোধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তরুণ প্রজন্ম এই নিষেধাজ্ঞাকে প্রতিবাদের আগুনে ঘি ঢালার মতো দেখেছে। তারা পথে নেমে আসে এবং আন্দোলন ক্রমশ বিস্তার লাভ করে।

‘হামি নেপাল’-এর নেতৃত্বে ছাত্র-যুবরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করলেও, সরকারের দমনমূলক আচরণ আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবন এবং একাধিক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালায়। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে সেনাপ্রধানের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন এবং সরকার ভেঙে পড়ে।